শিশু শিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাতীয় এসএমই ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৩ পেয়েছেন ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে দেয়া বাংলাদেশের সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার এটি। ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া সহ মোট ৭ জন এসএমই উদ্যোক্তা এবছর বিভিন্ন বিভাগে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ মে, ঢাকার আগরগাঁও-এ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত একাদশ জাতীয় এসএমই মেলা ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।
লাইট অফ হোপের প্রতিষ্ঠাতা ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া আইইউটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং জার্মানি থেকে দাদ স্কলারশিপ নিয়ে এনার্জি ও এনভেরনমেন্টাল ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০১৮ সালে ইউনিলিভার গ্লোবাল অন্ট্রাপ্রেনার অ্যাওয়ার্ড পান এবং যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসটেইনেবল লিডারশিপ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেন।
দেশের শিশুরা যাতে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার যোগ্য হয়ে উঠে সেই চিন্তা থেকে তিনি দেশে ফিরে এসে একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা নিয়ে শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার কাজে নামেন।
লাইট অফ হোপ লিমিটেড ৩ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এমন একটি সামগ্রিক ইকো-সিস্টেম তৈরি করেছে যেখানে শিশুদের মাঝে ভবিষ্যৎ দক্ষতা অর্জনে উচ্চমানের গবেষণালব্ধ লার্নিং প্রোডাক্টস, কন্টেন্টস, এবং কোর্স রয়েছে।
গুফি, লাইট অফ হোপ লিমিটেডের একটি শিশুদের মিডিয়া ফ্র্যাঞ্চাইজ। ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া গুফি থেকে শিশুদের জন্য কিছু জনপ্রিয় চরিত্র তৈরি করেছেন যারা শিশুদের মাঝে সহানুভূতি, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সহায়তা করে। এই চরিত্রগুলির সাহায্য ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া শিশুদের জন্য দারুণ সব শিশুতোষ গল্পের বই লিখেছেন এবং প্রকাশ করেছেন। পরবর্তিতে গল্পগুলো অ্যানিমেটেড করে টিভিতে সম্প্রচার করা হয় যাতে লক্ষ লক্ষ শিশু এই অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন দক্ষতা ও মুল্যবান ম্যাসেজ শিখতে পারে।
কিডস টাইম, ২০১৭ সালে সৃজনশীল আফটার-স্কুল প্রোগ্রাম হিসাবে শুরু হয়, যেটি বর্তমানে শিশুদের জন্য অনলাইনে এবং নিজস্ব কেন্দ্রগুলিতে সরাসরি বিভিন্ন কোর্স প্রদান করছে। এই পর্যন্ত মোট ৪০০০ এর বেশী শিশু কারুশিল্প, অঙ্কন, গল্প তৈরি, ইংরেজি বলা এবং সিঙ্গাপুর ম্যাথ কোর্স সম্পন্ন করেছে।
লাইট অফ হোপ টিচার্স টাইম নামে আরেকটি ব্র্যান্ড পরিচালনা করে, যা শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরকে অভিভাবকত্বের বিষয়ে সরাসরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এখন পর্যন্ত এই উদ্যোগটি ২০,০০০ এরও বেশি শিক্ষক এবং ১ লক্ষেরও বেশি অভিভাবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সংস্থাটি শিশুদের মাঝে পড়ার দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য বয়স-উপযোগী বই সহ সারা বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলিতে ৬২০ টি গ্রন্থাগার স্থাপন করেছে। বর্তমানে ২,৫০,০০০ এরও বেশি শিশু তাঁর ‘পড়ুয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই বইগুলোর পড়তে পারছে।
সেরা উদ্যোক্তা পুরস্কার পাওয়ার পর ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, “আমি প্রায় ১০ বছর ধরে শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। আমরা সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারী উদ্যোগ যেটি শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের কাজের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও সন্তুষ্ট।
এই পুরষ্কার আমার পুরো দলকে উৎসাহিত করবে এবং আমাদের পণ্য ও সেবাগুলোকে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরতে অনুপ্রাণিত করবে। আমাকে সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে মনোনীত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই”।